দেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি উদ্বেগজনক। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত থেকে রক্ষা পেতে নতুন করে ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য জানা যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। বুধবার এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের ভারে ন্যুব্জ। আগের রোহিঙ্গা এবং নতুন করে আসা রোহিঙ্গা উভয় মিলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার যে সংখ্যা, এর সঙ্গে বিগত ৬ বছরে নতুন করে জন্ম নেওয়া প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশু যোগ করলে সব মিলে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লক্ষাধিক, যাদের অর্ধেকের বেশি এসেছে ২০১৭ সালে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে এবং বর্বর হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিলেও গত সাত বছরে তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি মূলত দেশটির সামরিক সরকারের অনীহার কারণে। দেশটিতে বর্তমানে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা আরও বেড়েছে। দিন যত যাচ্ছে, ততই অসমাধানযোগ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্ব কমে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুর। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাই। এর ওপর আবার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’।

বস্তুত কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি সেখানে নানা আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করেছে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে বহু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এতে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির মতো ঘটনাও ঘটছে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। শুধু ক্যাম্পের ভেতরে নয়, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্তের শূন্যরেখা এবং আশপাশের দ্বীপে অপরাধীদের ঘাঁটি গড়ে ওঠার তথ্যও রয়েছে। তাই মিয়ানমার থেকে নতুন করে আগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দেশে নেই, বরং যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।





Reviewed by Kaku on May 01, 2025 Rating: 5

No comments:

Dangerous Force 2012-19
Powered by Blogger.